পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তন এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণন (পাঠ ৬-৭)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান সৌরজগৎ ও আমাদের পৃথিবী | - | NCTB BOOK
89
89

তোমরা দেখ সকালে সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম দিগন্তে ডুবে যায়। পরদিন সকালে তোমরা দেখো যে সূর্য আবার পূর্বদিক থেকে উঠছে। এ থেকে মনে হয় সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরছে। আগের দিনে মানুষ তাই ধারণা করত যে পৃথিবী স্থির এবং সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে এবং পৃথিবী নিজ অক্ষের উপরও আবর্তন করে বা পাক খায়। তোমরা নিশ্চয়ই লাটিম নিয়ে খেলেছো? লাটিম কীভাবে ? লাটিম তার সরু আল-এর উপর দাঁড়িয়ে নিজে নিজে পাক খায় বা আবর্তন করে। একই সাথে মাটির উপর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়।

এভাবে লাটিমটির দুই ধরনের গতি রয়েছে। একটি হলো নিজ অক্ষের উপর আবর্তন। আরেকটি হলো মাটির উপর দিয়ে ঘুরে। লাটিমের মতো পৃথিবীরও দুই ধরনের ঘূর্ণন রয়েছে। একটি হলো পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর কেন্দ্র করে ২৪ ঘণ্টায় একবার পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে। এটিকে বলা হয় পৃথিবীর আহ্নিক গতি। দ্বিতীয়টি হলো পৃথিবী প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময়ে একবার সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসে। একে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বলা হয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অর্থাৎ নিজ অক্ষে আবর্তনের কারণে দিনরাত হয়। দিনরাত কীভাবে হয় তা নিচের পরীক্ষাটির মাধ্যমে ভালভাবে বোঝা যায়।

পরীক্ষণ: পৃথিবীর আহ্নিক গতির পরীক্ষা: দিনরাত কীভাবে হয়?
উপকরণ: একটি ভূগোলক, একটি মোমবাতি অথবা কুপিবাতি অথবা চার্জলাইট।
পরীক্ষণ প্রণালী: প্রথমে ভূগোলক ভালোভাবে লক্ষ করো। এর মাঝ বরাবর একটি শলাকা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গেছে। এটিকে পৃথিবীর অক্ষরেখা হিসেবে কল্পনা কর যাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী আবর্তন করে।

একটি টেবিল বা সমতল মেঝের উপর বাতিটি জ্বালিয়ে রাখ। এবার একটু দূরে ভূগোলকটিকে রাখ। কক্ষটির আলো নিভিয়ে বা দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরটি অন্ধকার কর। বাতিটিকে সূর্য এবং ভূগোলকটিকে পৃথিবী হিসেবে বিবেচনা কর। এবার ভূগোলকটির দিকে তাকাও। ভূগোলকটির সবদিক কি সমান আলোকিত? নাকি কোন দিক আলোকিত আর তার উল্টো দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন? দেখতে পাচ্ছ নিশ্চয়ই যে ভূগোলকটির অর্ধেক অংশ আলোকিত আর অন্য অর্ধেক অন্ধকারাচ্ছন্ন। কোন অর্ধেক আলোকিত? যে অর্ধেক বাতিটির দিকে আছে। আমরা আলোকিত অংশকে দিন আর অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশটিকে রাত মনে করতে পারি। এবার ভূগোলকটি আস্তে আস্তে ঘুরতে এবং লক্ষ করে দেখ কী হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে অন্ধকার অংশ আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছে এবং আলোকিত অংশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হচ্ছে। কিন্তু সবসময়ই ভূগোলকটির অর্ধেক অংশ আলো পাচ্ছে এবং বাকি অর্ধেক অংশ আলো পাচ্ছে না। এভাবে পৃথিবীর অর্ধেকাংশে দিন এবং বাকি অর্ধেক রাত চলতে থাকে। ভূগোলকটির একটি নির্দিষ্ট স্থান বাতিটির সামনে রেখে ধীরে ধীরে একদিকে ঘুরতে থাকলে ঐ আলোকিত অংশ (দিন) ধীরে ধীরে অন্ধকার হতে হতে একসময় পুরোপুরি অন্ধকার (রাত) হয়ে যাবে। একই দিকে আরও ঘুরতে থাকলে আবার ঐ নির্দিষ্ট স্থানটি আলোকিত হতে শুরু করে এবং একসময় পুরোপুরি আলোকিত হয়ে যায়। অর্থাৎ ঐ স্থানে আবার দিন ফিরে আসে।

এই পরীক্ষাটির মতো পৃথিবী তার নিজ অক্ষে আবর্তন করে ফলে আমরা দিন, তারপর রাত, আবার দিন, আবার রাত, আবার দিন এই রকম পরিবর্তন হতে দেখি। অন্য কথায়, দিনরাত-দিন-রাত-দিন এই পরিবর্তন আমরা দেখি কারণ পৃথিবী তার নিজ অক্ষে আবর্তন করে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion